ব্রাহ্মণপাড়া প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার ষাইটশালায় অন্যের জমি লিজ ডায়মন্ড জাতের লাউ চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবানের হয়েছেন কৃষক হানিফ সরকার। ৬৫শতক জমিতে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ২ লাখ টাকা আয় করেছেন তিনি। আশা করছেন চলিত মৌসুমে লাউ বিক্রি করেই তিন লক্ষ টাকা আয় হবে তার। বাজারের পাশে পতিত জমির মাঠে লাউচাষ করে এলাকাবাসীর মধ্যে তাক লাগিয়েছেন তিনি।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ষাইটশালা গ্রামের বাসিন্দা মো. হানিফ সরকার। তিনি কৃষিকেই প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, কৃষক হানিফ সরকার গত দুই বছর পূর্বে নিজ গ্রামের ষাইটশালা বাজার ও ষাইটশালা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে এক ব্যাক্তির কাছ থেকে ৬৫ শতক পতিত জমি লিজ নেন। ওই জমিতে তাঁর প্রমথ বছর মাচা নির্মাণ, বেড়া নির্মাণ ও শ্রমিকের মুজরী খরচ, চারা উৎপাদন, চারা লাগানোসহ দুই লক্ষ টাকা মতো খরচ হয়। প্রথম বছর তাঁর জমির লাউ বিক্রি করে খরচ উঠে আসে ও তাঁর এক লক্ষ টাকার মতো লাভ হয়। এ বছর ওই জমিতে নতুন করে মাচা ও বেড়া নির্মাণ করতে হয়নি তাঁর। যার ফলে তাঁর চারা উৎপাদন ও লাগানোসহ মাত্র ৬০হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চলিত মৌসুমে তিনি এখন পর্যন্ত দুই লক্ষ টাকার লাউ বিক্রি করেছেন।
কৃষক হানিফ সরকার বলেন, দুই বছর পূর্বে আমি অন্যের জমি লিজ নিয়ে ডায়মন্ড জাতের লাউ চাষ শুরু করি। প্রথম বছর জমি তৈরি, জমিতে মাচা ও চারদিক দিয়ে বেড়া নির্মাণসহ আবাদ খরচ বেশি হয়েছে। তাই ওই বছর আমার তেমন লাভ না হলেও এ বছর উৎপাদন খরচ কম হয়েছে। তাই গত বছরের তুলনায় এ বছর আমার বেশি লাভ হবে আশা করছি। তিনি বলেন, প্রতিটি লাউ বাজারে পাইকারী ৫০/৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ১ দিন পর পর জমি থেকে ১ থেকে দেড়শ পিচ লাই উত্তোলন করে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা বিক্রি করতে পারি। এ বছর আমি দুই লক্ষ টাকার লাউ বিক্রি করেছি। এখনো জমিতে যে পরিমান লাউ আছে এবং নতুন করে ফলন আসতেছে আশা করছি আরও দেড় লক্ষ টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবো। কৃষক হানিফ সরকার আরও বলেন, লাউ চাষ করে আমি যেমন অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছি অন্যদিকে আমার জমিতে কাজ করে এলাকার ৪-৫ জনের কর্মের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রতিদিন আমার এ জমিতে এলাকার ৪-৫ জন লোক পরিচর্যার কাজ করে তাদের পারিবারিক জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
লাউ নিতে আসা এলাকার এক যুবক ইসমাইল হোসেন বলেন, হানিফ সরকারের লাউ ক্ষেত এখন এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। প্রতিদিন তাঁর লাউ ক্ষেত দেখতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আসেন। এক সাথে ৬৫শত জমিতে লাউয়ের সবুজ পাতার মধ্য সাদা রংয়ের লাউফুল যেন মাঠের শোভা বর্ধন করে আছে।
জমি থেকে লাউ কিনতে আসা আরেক ব্যাক্তি নূর আলম সরকার বলেন, কোন প্রকার কিটনাশক ছাড়া জমি থেকে তাজা লাউ কিনে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ায় এক প্রকার আনন্দ আছে। এলাকার বেশি ভাগ মানুষ বাজার থেকে লাউ না কিনে হানিফ সরকারের জমি থেকেই লাউ কিনেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল হাসান বলেন, চলিত বছরে ব্রাহ্মণপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা অন্যান্য সবজির পাশাপাশি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের পরামর্শে লাউ চাষ করেছেন। এর মধ্যে ষাইটশালা গ্রামের কৃষক হানিফ সরকার ৬৫শতক জমিতে লাউয়ের আবাদ করেছন। তাদের আবাদকৃত জমির লাউ ইতিমধ্যে বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। ব্রাহ্মণপাড়ায় কৃষকের যে কোনো সমস্যা সমাধানে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছে। ষাইটশালা গ্রামের হানিফ সরকারের মতো লাউ চাষ করে উপজেলার অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হয়েছে। ইতিমধ্যে এই উপজেলায় লাউ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page